মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১২

কাঁদো কবি কাঁদো


সৈয়দ আবুল মকসুদ | তারিখ: ১৯-০৬-২০১২




সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অতুলনীয় উপন্যাসটির নাম কাঁদো নদী কাঁদো। বাংলার মানুষের চেতনাপ্রবাহ রীতিতে উপন্যাস লেখার ক্ষমতা থাকলে তারা লিখত ‘কাঁদো কবি কাঁদো’।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ছেলে ছোটখাটো কবি ছিলেন না। সুখ-দুঃখের বহু রকমের কবিতাই লিখেছেন। চোখের সামনে একের পর এক প্রিয়জন চলে গেছে। দুঃখের গানও লিখেছেন অনেক। মহর্ষিপুত্র নিজের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন অন্যকে। অন্যরাও তাঁর পদ্য আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন তাঁকে। কিন্তু তিনি তাঁর কবিতা ও গান শুনে কাঁদেননি। যদি একবার কোনো রকমে কাঁদতেন, তা হলেই হয়েছিল! সেই কান্নার পটভূমি, কবার রুমালে চোখ মুছেছেন এবং সেই কান্নার তাৎপর্য বাঙালির জীবনে কতটা—প্রভৃতি নিয়ে হতো গবেষণা। এবং নির্দ্বিধায় বলা যায়, তাঁর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশে যে ২৫০টির মতো বই বেরিয়েছে সেখানে যোগ হতো আর একখানা, যার শিরোনাম হতো: ‘রবীন্দ্রকান্নার বহুমাত্রিকতা’ অথবা ‘রবীন্দ্রনাথের কান্না ও বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা’। কিন্তু দূরদর্শী কবি কাঁদেননি, তাই ওই বিষয়ে বই পড়ার বিড়ম্বনা থেকে বাঙালি বেঁচে গেছে।
কিন্তু যা কখনো আগে হয়নি, বাঙালির জীবনে তা এই কলি কালে ঘটবে না, বাঙালি তেমন জাতিই নয়, চর্যাপদের পর থেকে হাজার বছরের বাংলা কাব্যের ইতিহাসে গত বুধবারই প্রথম কোনো কবি নিজের কবিতা আবৃত্তি শুনে কাঁদলেন। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ‘অনুষ্ঠানে কারাবাসের ঘটনা নিয়ে লেখা কবিতা আবৃত্তির সিডি বাজানোর একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন এরশাদ। চোখ মুছে বক্তব্য দিতে আসেন মঞ্চে। তিনি বলেন, ছয় বছর কারাবাসের পর নিজের বাড়ির পেয়ারাগাছের নিচে বসে কবিতাটি লিখেছেন।’ আম, আতাফল বা বরইগাছ নয়; ওই কবির পেয়ারাগাছের নিচে বসে কবিতা লেখা খুবই অর্থবহ।
মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে ছাতিমগাছের তলায় বসে কিছু গান-টান লিখেছেন। কাজী ফকির আহমদের পাগল ছেলেটির মাথার ওপর কোনো গাছপালার ছায়া ছিল না। রাস্তাঘাটে যেখানেই বসেছেন, সেখানেই লিখে ফেলেছেন কবিতা, আর হো হো করে হেসেছেন। আমাদের কবির মতো কাজীপুত্রও কারাগারে গেছেন এবং লিখেছেন: ‘কারার ওই লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট...’। তাঁর কবিতা শুনে তিনি নিজে বা অন্য কেউ কাঁদেনি। কিন্তু তাদের রক্তে আগুন লেগে গেছে।
যে কবি নিজের কবিতা শুনে কাঁদেন, তিনি চাট্টিখানি কবি নন। বিরাট কবি বাল্মীকি কাঁদেননি। মহাকবি কালিদাস তাঁর নিজের কবিতা শুনে কাঁদেননি। মহাকবি ফেরদৌসির শাহনামায় কাঁদার মতো কাহিনি বহু আছে। তা পাঠ করে চোখের পানি ফেলেছেন কেউ কেউ। কবি নিজে কাঁদেননি।
কাঁদো নদী কাঁদোর কাহিনি গড়ে উঠেছে বাঁকাল নদী ও কুমুরডাঙ্গাকে কেন্দ্র করে। ‘বাঁকাল নদীতে চড়া পড়ার জন্যে আর স্টিমার আসবে না।’ চড়ার কথাটা প্রথমে শহরের প্রভাবশালী উকিল কফিলউদ্দিনও বিশ্বাস করে না, তার প্রশ্ন: ‘কোথায় চড়া পড়েছে, কেই বা বলেছে চড়া পড়েছে?’ আসলে কি গল্প-উপন্যাসে, কি বাস্তব জীবনে নেতৃত্বস্থানীয়রা কোনো অমঙ্গলের কথাই বিশ্বাস করেন না।
এর মধ্যে বিপত্তি ঘটায় মোক্তার মোসলেহউদ্দিনের মেয়ে সখিনা। সে ‘একটি বিচিত্র কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়’ নদীর ভেতর থেকে। কুমুরডাঙ্গা সম্পর্কে ওয়ালীউল্লাহর কথাই হুবহু উদ্ধৃতি করি: ‘কুমুরডাঙ্গার লোকেরা এমনই হিংসুটে এবং নীচমনা যে নিজের নাক কেটেও পরের ক্ষতি করতে তারা সদা প্রস্তুত। অবশ্য কুমুরডাঙ্গার আর্থিক অবস্থাটা ভালো নয়,...রাহাজানি, খুনখারাবী, নারী ধর্ষণ এসবের মতো দারিদ্র্যও নৈতিক অবনতির একটি লক্ষণ। [শহরবাসী ভাবে]...ভয়ঙ্কর বিপদ গুটিগুটিপায়ে কুমুরডাঙ্গার দিকে এগিয়ে আসছে, এমন কোনো মহামারী যা সমগ্র শহর উজাড় করে দেবে? বা কোনো মহাপ্লাবন যা দুরন্তবেগে ছুটে এসে মানুষের ঘরবাড়ি গোলাঘর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে? অথবা কোনো প্রচণ্ড ভূমিকম্প যা নিমিষের মধ্যে পায়ের নিচের শক্ত জমিকে বিশালকায় কোনো জন্তুর মুখগহ্বরে পরিণত করবে?’
বাঁকাল নদী আর কুমুরডাঙ্গা আজকের বাংলাদেশের প্রতীক। বাংলার বুক থেকে মধ্যরাতে একটি কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। কুমুরডাঙ্গার মানুষের মতো বাংলাদেশের মানুষের মনেও অজানা আশঙ্কা। কখন কী ঘটে! চেতনার নদীতে চড়া। জনজীবনে নীরব কান্নার আওয়াজ। সখিনার মতো হতভাগিনীরা সে কান্না শোনে। নেতারা বিশ্বাস করেন না। কারণ, তাঁরা নিজের কানে কোনো কান্নার আওয়াজ শোনেননি। কবি ও রাষ্ট্রপতি কাঁদেন নিজের মনের দুঃখে। দেশের দুঃখে চোখে পানি আসে না।
ওই কবিতাপাঠের আসরে শেষ কথা কান্না নয়। খুশির কথাও ছিল। সেটি পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম নয়, দ্বিতীয় ঘটনা। অমন ঘটনা প্রথম ঘটে মোগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের জীবনে। তাঁর প্রিয় পুত্র হুমায়ুন মৃত্যুশয্যায়। তিনি তাঁর শয্যার চতুর্দিকে পায়চারি করতেন আর প্রার্থনা করতেন: হে খোদা, আমাকে তুমি নিয়ে যাও, আমার অবশিষ্ট আয়ু হুমায়ুনকে দিয়ে তাকে বাঁচিয়ে তোলো। শিগগিরই বাবর শয্যা গ্রহণ করেন এবং মারা যান। হুমায়ুন সুস্থ হয়ে মোগল সাম্রাজ্যের পরমায়ু ৩৩১ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ করেন।
সেদিনের কবিতাপাঠের আসরে জাতীয় পার্টির মহাসচিব কবিতা শুনে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে প্রার্থনা করেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের সবার কাছ থেকে আয়ু নিয়ে আমার নেতার আয়ু বাড়িয়ে দাও।’
ওই মোনাজাতের পরে আসুন আমরা সবাই বলি: আমিন।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১২

বাঙালি চরিতামৃত

সৈয়দ আবুল মকসুদ

লক্ষ্মণ সেন ও বখতিয়ার খিলজির পরবর্তী হাজার বছরের বাংলার ইতিহাসে গত হপ্তায় প্রথম হয়ে গেল কফিন র‌্যালি। বাংলার মাটিতে একবার কেউ কোনো কিছু শুরু করলে তা আর থামে না। চলতে থাকে অপ্রতিহত গতিতে। অবিলম্বে কফিন র‌্যালির কারণে যানজট বেঁধে যাবে প্রেসক্লাব, মৎস্য ভবন, মওলানা ভাসানী এভিনিউ থেকে জাদুঘর পর্যন্ত। শুধু ঢাকায় নয়, জেলা ও উপজেলা সদরেও হবে। নানা দাবি আদায়ে হবে কফিন র‌্যালি। কেউ করবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে, কেউ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে, কেউ ইসলামি শরিয়া বাস্তবায়নের দাবিতে, কেউ অতি দ্রুত পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবিতে, কেউ টিপাইমুখ ও তিস্তা চুক্তির ইস্যুতে, কেউ বিদ্যুতের দাবিতে, কেউ সপ্তম নৌবহর ‘দ্বিতীয় বাংলাদেশে’ এসে নোঙর ফেলতে না পারে সে দাবিতে, কেউবা কালোটাকা সাদা করার দাবিতে।
আমি প্রথম শিরোনাম দেখে মনে করেছিলাম, নতুন বাজেটে কফিনের ওপর ভ্যাট নামক কর আরোপের প্রতিবাদে কফিন মিছিল ও সমাবেশ। কারণ, এমন বিষয় নেই যার ওপর মাননীয় অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আরোপ করেননি। বিস্ময়ের ব্যাপার, কফিনের ওপরই তিনি ভ্যাট আরোপ করেননি। হয়তো মনে পড়েনি ওই বস্তুটির কথা, কফিন মিছিল হয়েছে ‘নিরাপদে হাঁটার পরিবেশের দাবিতে’।
‘পথচারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন ও বাজেট বরাদ্দ করে নগরে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার জন্য যান্ত্রিক যানের গতি নিয়ন্ত্রণ’-এর দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে কফিন র‌্যালি হয়। র‌্যালির যাঁরা আয়োজন করেন, তাঁরা কেউই পাবনার হেমায়েতপুর থেকে ছাড়া পাওয়া মানুষ নন। ওখান থেকে ছাড়া পেলেই ঢাকা দক্ষিণে এসে তাঁরা কফিন র‌্যালি করবেন, অত পাগল তাঁরা কেউ নন। কফিন র‌্যালির আয়োজন করে একটি নয়, দুটি নয়—১১টি বেসরকারি সংগঠন।
কফিন র‌্যালি অতিদূরদর্শী ও খুবই বাস্তব চিন্তাপ্রসূত কর্মসূচি। তার পেছনে রয়েছে গভীর ফিলোসফি। দুঃখবাদী জার্মান দার্শনিক আর্থার শোপেনহাওয়ার আজ বেঁচে থাকলে খুশি হতেন। আড়াই শ বছর পরে তাঁর দর্শনের বাস্তবায়ন হলো বাংলার মাটিতে। উচ্চমধ্যবিত্ত বাঙালি প্রবীণ আর কফিনের সম্পর্ক আজ ঘনিষ্ঠ। তাঁরা থাকেন ঢাকায় একা চাকরদের নিয়ে। ছেলেরা থাকে আমেরিকায়। বড় মেয়ে স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায়, ছোট মেয়ে একগাদা বাচ্চা নিয়ে কানাডায়। শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর গরম পানি ও বরইপাতা দিয়ে গোসল দিয়েই দাফন হবে, তা সম্ভব নয়। হাসপাতালে নার্সদের হাতের মধ্যে দমটা তো বেরোল। তারপর প্রাণহীন শরীরটা না হয় আত্মীয়স্বজন টানাটানি করল। ছোট মেয়ের আবার বাচ্চা হবে। স্ত্রী গেছে ওই অজুহাতে কানাডা বেড়াতে। সারাজীবন জ্বালাতন করলেও শেষ দেখাটা দেখতে চান। তাঁর আসতে লাগবে তিন দিন। ছেলেদের একজন তো আসবেই না। যে ছেলে আসবে বাবার লাশ দেখতে, তারও তিন দিনের আগে পৌঁছা সম্ভব নয়। আরেক মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে স্বার্থপরের মতো চলে গেলেও এখন জন্মদাতার মরা মুখ দেখতে অনর্থক অস্ট্রেলিয়া থেকে আসবে। অত টাকা খরচ করে তার জামাইয়ের আসার একেবারেই ইচ্ছা নেই। অথচ বউকে খুশি করতে না এসে উপায়ও নেই। কয়েকটি এয়ারলাইনস ঘুরেছে সস্তায় টিকিটের জন্য। শেষ পর্যন্ত কনসেশনে একটা কোম্পানিতে পাওয়া গেছে। তার ফ্লাইট ছয় দিন পরে। মনে মনে গজগজ করতে করতে বাসায় ফিরে বউকে বলবে, ‘আব্বা আমাকে এত আদর করতেন। তাঁর চেহারাটা আমার চোখে ভাসতেছে দুদিন যাবৎ। অনেক কষ্টে টিকিট পাইলাম। আমার নিজের বাবা মারা গেলেও যাইতাম না। মঙ্গলবার সকালে ফ্লাইট। রেডি হয়ে নাও।’
এসব কারণে বাংলার মধ্যবিত্ত প্রবীণেরা একটা সময় কফিনের কথা না ভেবে পারেন না। কারণ, ওই বাক্সের ভেতরে তাঁকে বারডেমের হিমঘরে কাটাতে হবে পুরো একটি সপ্তাহ। মৃত্যুর পরবর্তী প্রথম একটি ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ওই সময়টুকুতেই প্রিয়জনেরা কান্নাকাটি করে। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পরে যারা এসে জড়ো হবে, তাদের মধ্যে শোকের লেশমাত্র থাকবে না।
তা ছাড়া উচ্চমধ্যবিত্তের নানা রকমের ফ্যাকরা আছে। পাকিস্তান আমলে মারা গেলে ঠাঁই হতো সোজা আজিমপুর। কিন্তু স্বাধীনতার পরে দেখা গেল, ওটা সেকেলে হয়ে গেছে। ওখানে বেওয়ারিশ, গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্তরা থাকুক। শুরু হলো বনানীতে ভিড়। ওখানে দাফন হওয়া একটা স্ট্যাটাসের ব্যাপার। আশির দশকে শুরু হলো আরেক নতুন চালাকি। জীবনকালে মুক্তিযুদ্ধের ধারেকাছে ছিলেন না, মনপ্রাণ দিয়ে একাত্তরের টিক্কা খাঁর অবৈধ প্রশাসনকে সহায়তা করেছেন। তিনবার ঘুরে এসেছেন পশ্চিম পাকিস্তান। অক্টোবর, নভেম্বরেও লাহোরে করেছেন প্রচুর কেনাকাটা। গেছেন ল্যান্ডিকোটলি। ছেলেমেয়েরা সব জানে। কিন্তু তারা প্রমোশনের প্রয়োজনে ও অন্যান্য সুবিধা নিতে বুকে আঙুল ঠুকে বলে, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। হাসপাতালে ডাক্তার মুখ গম্ভীর করে বারান্দায় এসে কঠিন সংবাদটা দিতেই ছেলেমেয়েরা সিদ্ধান্ত নেয়, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা গোরস্তানে ব্যবস্থা করতে। লোকে যখন জিজ্ঞেস করবে, ‘হাওলাদার সাহেবকে কোথায় দিলেন?’ তখন যাতে বলা যায়, ‘মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে।’ ওই কথাতে লোকে ধরে নেবে, বাবা বারো আনা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। শুধু ১০ হাজার টাকা খরচ করে সার্টিফিকেটটা জোগাড় করার প্রয়োজন মনে করেননি।
বাঙালি মধ্যবিত্তের মাথায় বুদ্ধি অতি বেশি, তা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। কফিন র‌্যালি কোনো সাধারণ প্রতিবাদ কর্মসূচি ছিল না। তাতে প্রকাশ পেয়েছে একালের বাঙালির প্রজ্ঞা, পরিমিতিবোধ, দ্রোহ, দূরদৃষ্টি ও সংগ্রামী চেতনা। এ ধরনের বুদ্ধি তিতুমীর, সূর্য সেন বা সুভাষ বসুর থাকলে তিরিশের দশকেই উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশরা বিতাড়িত হতো, সাতচল্লিশ পর্যন্ত বসে থাকতে হতো না।
এমন কর্মসূচি ভাসানী-মুজিব পালন করলে পঞ্চাশের দশকেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতো। দিন সাতেকের মধ্যে দাবি আদায়ের এমন কৌশল ইরাকিদের জানা থাকলে মার্কিন সেনারা অনেক আগেই বাগদাদ থেকে পালাত। জায়গা থাক বা না থাক, ফুটপাতে হেলেদুলে অথবা হন হন করে হাঁটার জন্য তা ১০ হাত চওড়া করতে হবে। মোটরগাড়ি, বাস-ট্রাক চলাচলের জন্য মূল রাস্তা যদি গলির মতো সরু হয়, তাতে ক্ষতি নেই। বরং তাতে লাভ এই যে, গাড়ি কম চলবে। তাতে দুর্ঘটনা কমবে। পরিবেশদূষণ হবে না। জ্বালানির খরচ কমবে। মানুষ হেঁটে যাতায়াত করবে। তাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। কফিন বানানোর কাঠের প্রয়োজন হবে কম। বাঁচবে বনের গাছ। বাংলাদেশ হবে সুখী ও সমৃদ্ধ।
কফিন মিছিল আরেকটি বার্তা পৌঁছে দেয় সরকারকে। ফুটপাত ১০-১২ হাত চওড়া না করলে নিরাপদে হাঁটা যাবে না। না হাঁটলে শরীরে চর্বি জমবে। হূদরোগ, ডায়াবেটিসে মানুষ মারা যাবে। সুতরাং ফুটপাত চওড়া করতে বাজেটে টাকা বরাদ্দ চাই। তা না দিলে তিতুমীর, সূর্য সেনের মতো লড়াই করে জীবন উৎসর্গ করব। উৎসর্গ মানে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মারা যাব। তখন কফিনই হবে শেষ আশ্রয়। এই কর্মসূচির মধ্যে সরকারকে ভয় ধরিয়ে দেওয়া।
যুগে যুগে, দেশে দেশে বড় বড় অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে প্রতীকী কর্মসূচি পালিত হয়। কিন্তু বাংলার মানুষকে দেখেছি, লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় কোত্থেকে কয়েকটি জোনাকি পোকা ধরে এনে ‘জোনাকি মিছিল’ করতে। আরেকটু মোটা বুদ্ধি যাঁদের, তাঁরা করেন হারিকেন ও কুপি মিছিল। ঝাড়ু ও জুতা মিছিল আজ দেদার হচ্ছে। যেকোনো দাবিতে তা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ভর্তির দাবিতে হতে পারে। সর্বোচ্চ দরপত্রকে টেন্ডার দেওয়ার দাবিতে হতে পারে। বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে হতে পারে ঝাড়ু মিছিল। পানির দাবিতে বাংলার নারীকে কলস, হাঁড়ি-পাতিল ও বদনা নিয়ে মিছিল করতে দেখেছি দক্ষিণ রাজধানীতে। কোথাও একদিন হয়ে গেল থুতু ফেলা কর্মসূচি। দ্রোহ ও বুদ্ধির অপূর্ব মিশ্রণে প্রতিবাদ করতে পারে একমাত্র বাঙালি।
তবে বাঙালির কাছে সুন্দর জীবনের চেয়ে মৃত্যুর নীরবতা অনেক বেশি মূল্যবান। তাই সুন্দর জীবনের প্রতীক নিয়ে কোনো র‌্যালি নয়, মিছিল ও পাঁচ ঘণ্টার আমরণ অনশন হয় কাফনের কাপড় পরে। মিছিল হয় কফিন কাঁধে নিয়ে। অবশ্য বাঙালি অত বোকা নয় যে, শুধু পারলৌকিক জীবন নিয়ে ভাববে। ইহজগতের বুঝটাও সে বোঝে ভালো। গুণীজন সংবর্ধনা ও সম্মাননা প্রদান এখন মহামারির আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন যে কতজনকে দেওয়া হচ্ছে পদক-পুরস্কার, তার খবর জানে শুধু দক্ষিণ রাজধানীর বোবা দেয়ালগুলো। আজীবন সম্মাননা, স্বর্ণপদক, রৌপ্যপদক, ব্রোঞ্জপদক; বিভিন্ন ধাতুর যা দাম তাতে হয়তো শিগগিরিই প্রবর্তিত হবে অ্যালুমিনিয়াম ও লৌহপদকও। তবে সবচেয়ে ভালো হবে পঞ্চধাতুর মিশ্রণে এমন এক নতুন পদক চালু করা, যার নাম হবে ‘পঞ্চধাতুর পদক’। তাতে কারও ক্ষোভ থাকবে না, তাতে সোনা থাকবে এক অণুুপরিমাণ আর তামা ও লোহা থাকবে পুরোটা। পদকের সঙ্গে টাকাও বিতরিত হচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো।
তবে আজীবন সম্মাননা ও পদক পুরস্কারের সঙ্গে বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদীরা যোগ করেছেন গত চার বছর যাবৎ আরেকটি নতুন উপাদান। ক্রেস্ট, চেক ও সার্টিফিকেট গুণীজনকে দেওয়া হয় হাতে। গলা ও কাঁধ বলে, আমাকে কিছু দিলেন না। তাদের জন্য ওই উপহার। বিশুদ্ধ বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতিতে নতুন সংযোজন। উত্তরীয়। ওড়না নয়, চাদর নয়, গামছা নয়, মাফলারও নয়—অথচ ওই সবগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি এক খণ্ড বস্ত্র। বছর দশেক আগে পশ্চিমবঙ্গীয় কায়দায় চাদর ভাঁজ করে হাতে অথবা কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। উদ্দীনীয় সরকারের সময় যোগ হয় চাদরের সঙ্গে উত্তরীয়। উত্তরীয় শোভিত ছবি বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, জসীমউদ্দিন, বিভূতি, মানিক, বুদ্ধদেবদের দেখিনি। 
চিরকালের বাঙালি হিন্দু সংস্কৃতিও আজ বিশুদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের কাছে যথেষ্ট নয়। তাঁরা দক্ষিণ ভারতীয় অবাঙালি হিন্দুদের সংস্কৃতিকে মনে করছেন অতি আধুনিক বাঙালিয়ানার প্রতীক। মৌলবাদীরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করছেন আরব্য-সংস্কৃতি। অতি বাঙালিরা অত দূর যাননি। তাঁরা গেছেন দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত। আবরীয় সংস্কৃতি দ্রুত গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতি রাজধানী উত্তর ও রাজধানী দক্ষিণে ধীরে ধীরে চালু হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক আখ্যায়িত হয়ে গাল খাওয়ার ভয়ে মুখে এ নিয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। আমাদের অনুকরণপ্রিয় মানুষ। একবার কিছু চালু হলে তা থামানো কঠিন। এক সময় এমন অবস্থা হবে, এই জিনিস গলায় না ঝুলিয়ে কেউ শ্বশুরবাড়িও যাবে না। দেহে অন্য বস্ত্র থাকুক আর না থাকুক, গলায় উত্তরীয় শোভা পাবে বঙ্গসন্তানদের। বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তা ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। অথবা শাড়ি, গরু ও গরম মসলার মতো আসবে চোরাচালানের মাধ্যমে।
নীতিবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব দর্শনশাস্ত্রেরই শাখা। জাতীয়তাবাদী চেতনারও একটি দার্শনিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রতিবাদের নামে কুরুচিপূর্ণ কাজ করা অনৈতিক। স্বকীয়তা মানুষের অমূল্য সম্পদ। আমাদের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ‘জাতীয়তাবাদ’। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো জাতীয়তাবাদও মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। কুরুচিপূর্ণ কাজ ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অপচর্চা থেকে মানুষকে বিরত রাখেন এমন নেতৃত্ব কোথায়?
শ্রেষ্ঠদের নিয়ে জাতি গর্ব করে। কিন্তু কোনো জাতির স্বভাব-চরিত্রের পরিচয় তার শ্রেষ্ঠদের পরিচয়ে নয়, সাধারণদের পরিচয়ে। বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, নজরুলকে দিয়ে বাঙালি জাতির স্বভাব-চরিত্র, মেধা, নৈতিকতা, মননশীলতা, সৃষ্টিশীলতা ও রুচির পরিমাপ করা যাবে না। রহিম-করিম, রাম-শ্যাম, যদু-মধু, ছলিমুদ্দি-কৈমুদ্দিরাই বাঙালির প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের আজকের অসাধারণ-সাধারণ কারও কাজই জাতি গঠনমূলক নয়, আত্মঘাতী। এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে আমাদের স্বাধীন অস্তিত্ব অর্থহীন হয়ে পড়বে।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

সোমবার, ৪ জুন, ২০১২

নিরাপদ দূরত্ব-তত্ত্ব


সৈয়দ আবুল মকসুদ | তারিখ: ০৫-০৬-২০১২

এ মাটির মানুষের এমনই নিয়তি যে রাস্তায় বেরোলে গাড়িচাপা পড়ে মরে। গাড়ির যাত্রী হলে গাড়িসহ খাদের মধ্যে গিয়ে পড়ে মরে। আমরা বললাম, চালকদের একটু ভালোমতো যোগ্যতা পরীক্ষা করে লাইসেন্স দিন। চালকদের অকৃত্রিম সুহূদ সে অনুরোধ খারিজ করে দিয়ে মন্ত্রী উপস্থিত করলেন তাঁর ‘গরু-ছাগল চেনা তত্ত্ব’।
রাস্তাঘাট, কোর্টকাচারিতে সাংবাদিকেরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে পোশাক পরা জনগণের বন্ধুরা তাদের বেদম মারধর করেন। আরজি করা হলো: মারধর ভালো লাগে না, তাদের একটু সামলান। প্রত্যুত্তরে তাদের মালিক উপহার দিলেন ‘নিরাপদ দূরত্ব থিওরি’।
সব চালক মানুষ মারেন না। সব পুলিশও সাংবাদিক ও শিক্ষকদের মারেন না। যাঁরা সড়কে দুর্ঘটনা ঘটান ও সংবাদমাধ্যম কর্মীদের মারেন, শিক্ষকদের পেটান, আমরা শুধু তাদেরই সামলাতে বলেছিলাম। পরিণামে জাতি উপহার পেয়েছে দুই তত্ত্ব: গরু-ছাগল চেনা তত্ত্ব এবং নিরাপদ দূরত্ব-তত্ত্ব। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব, আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের মতো এ দুই তত্ত্বও মানুষ মনে রাখবে বহুকাল।
মাননীয় ঠিকই বলেছেন, দূরত্বটা হতে হবে নিরাপদ। যে দূরত্বে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তার চেয়ে বেশ দূরে। তবে সেই নিরাপদ দূরত্ব গজ-ফিতার হিসাবে কতটা, তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি। এক শ গজ না আড়াই শ গজ—তা সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। মাপজোখ করে কোনো অধিবেশনে হয়তো আইন পাস হবে: ‘সংবাদমাধ্যমের লোকদের জনগণের বন্ধুদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব রক্ষা আইন ২০১২’।
নিরাপদ দূরত্ব রক্ষার উপদেশ দেওয়া হয়েছে দুটি কারণে। এক. তাতে সংবাদমাধ্যম কর্মীরা শারীরিকভাবে অক্ষত থাকবেন। হাড্ডি গুঁড়া হবে না। পায়ের মাংসপেশি থেঁতলে যাবে না। ঊরুর হাড় লাথিতে ভাঙবে না। ঘুষিতে ফাটবে না নাক। চড়থাপ্পড়ে মুখমণ্ডল ফুলে হবে না মিষ্টি কুমড়ার মতো গোল।
দুই. জনগণের বন্ধুদের থেকে সংবাদকর্মীরা যত দূরে থাকবেন তত তাঁরা কম দেখবেন। আসল ঘটনা কম জানবেন, ফলে জনগণও কম জানবে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে ছবি তোলায় প্রকৃত ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়বে না। জনগণ যত কম জানবে ও দেখবে, তত তারা দূরে থাকবে সত্য থেকে। সত্য থেকে জনগণকে দূরে রাখাই নিরাপদ দূরত্বের মর্মবাণী।
সংবাদকর্মীরা জনগণের বন্ধুদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলে কোনো পৌরাণিক মহাকাব্য অশুদ্ধ হবে না। কিন্তু কোনো নারীর (বিশেষ করে থুত্থুরে বুড়ি না হয়ে যদি যুবতী হন) বন্ধুদের থেকে দূরত্বটা শুধু নিরাপদ হলে হবে না—তাকে থাকতে হবে নিরাপদতম দূরত্বে। কোনো বিপদে পড়ে যদি তার পুলিশের ও আইনের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তা হলে তাকে আদালতে আরজি পেশ করতে হবে আধা কিলোমিটার দূর থেকে। মাইকযোগে তাকে জানাতে হবে কে তার শ্লীলতাহানি করেছে বা করার আয়োজন করেছিল। পুলিশের কাছে এসে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার শ্লীলতাহানির ঝুঁকি নেওয়ার চেয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকাই বুদ্ধিমতীর কাজ।
একজন পুরুষের পক্ষে কোনো নারীর শ্লীলতাহানির যন্ত্রণা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আরেকজন নারীর পক্ষে উপলব্ধি করা সহজ। সে নারী পর্বতারোহী বা সাংবাদিক বা মন্ত্রী হোন। যদি আদর করেও টেনেহিঁচড়ে কোনো মেয়েকে তার বাপ-মার সামনে তাদের ক্লাবে নেয়, নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বা নির্যাতন করে, কোনো কোনো রাষ্ট্রে তা বড় অপরাধমূলক কাজ না হতে পারে, কিন্তু কাজটা যে জঘন্য তা কোনো নারী মন্ত্রীর পক্ষে না বোঝার কথা নয়। ঘটনাটির কথা তাঁর কানে যাওয়া মাত্র তাঁর বারুদের মতো জ্বলে ওঠার কথা। একটি মেয়ের ইজ্জতের চেয়ে একটি পুলিশের চাকরির মায়া বেশি! বর্বর যুগেও নারীর ওপর নির্যাতন কোনো সমাজই সহ্য করত না।
যে রাষ্ট্রে আদালত প্রাঙ্গণে বিচার চাইতে গিয়ে নারীকে সম্ভ্রম হারাতে হয়, সে রাষ্ট্র আইয়ামে জাহেলিয়াতের চেয়ে জঘন্য। তারপর ইজ্জত হারানোর প্রতিকার তো দূরের কথা, নির্যাতিতা যদি প্রভুদের মৌখিক সান্ত্বনাটুকুও না পায়, তারচেয়ে নিষ্ঠুরতা আর হতে পারে না। এ ধরনের অপরাধীর বিচার হওয়া উচিত তাৎক্ষণিক, যেমন হরতালের দিনে মোবাইল কোর্টে হয়। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী অল্পসংখ্যক চালক। সাংবাদিক, শিক্ষক ও নারী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত অল্প কয়েকজন জনগণের বন্ধু। সেই ঘাতক চালক ও নির্যাতক পুলিশের পক্ষে অবস্থান নিলে দক্ষ ও ভালো চালক এবং দক্ষ ও সজ্জন পুলিশকেই অপমান করা হয়।
এ মাটিতে অযোগ্য, অদক্ষ ও অসাধু পান উচ্চাসন। সভা-সমাবেশ-গোলটেবিলে বাচাল ও বেসৎ মানুষের কথা দেশবাসী আড়িপেতে শোনে। এক প্রসিদ্ধ মন্ত্রী বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রীকে পদত্যাগ করতে। কারণ তিনি ব্যর্থ। কিন্তু মাননীয় তো খুব ভালো জানেন, বাংলার মাটিতে পদত্যাগ করলেও তা গৃহীত হয় না। সাংসদের পদত্যাগ গৃহীত হয় না। প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয় না। মন্ত্রীরটা হয় না। বিরোধীদলীয় নেত্রী যদি পদত্যাগ করেনও তা গৃহীত হবে না। তাঁর বেতন-ভাতা-বাড়িভাড়া জমা হবে ব্যাংকে। সংসদ সচিবালয় থেকে বলা হবে: পদত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদলীয় নেত্রীকে করা হলো দপ্তরবিহীন বিরোধীদলীয় নেত্রী।
উঁচু আসনে বসা ব্যক্তিদের কথাবার্তা হুঁশ করে বলা ভালো। নির্বুদ্ধিতার প্রকাশ ঘটে তেমন বক্তব্য না দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।