কোনো বর্বরোচিত অপরাধ এবং তা যদি হয় রাজনৈতিক—তার তদন্তের
ধারা বিচিত্র পথে প্রবাহিত করতে বাংলাদেশ এক লীলাভূমি। এবং অপরাধ হলেই হবে
না। রাষ্ট্র প্রথমেই
বিবেচনায় আনবে অপরাধকাণ্ডের ভিকটিম বা শিকারটি কে। যদি তিনি হন
ক্ষমতাসীনদের কেউ, তাহলে মামলাটি হবে একরকম, তার তদন্তের পদ্ধতি হবে আলাদা;
যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন সরকারের বিরুদ্ধপক্ষের কেউ, তাহলে মামলাটির ধরন হবে
অন্য রকম, মামলাটির তদন্ত হবে সম্পূর্ণ অন্যভাবে।
২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা হামলা নিয়ে আমি এর আগে কয়েকটি লেখা লিখেছি। প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয় ঘটনার একদিন পরে আমার এই কলামে। হাসপাতালে আহতদের দেখে এসে লেখা বলে লেখাটি ছিল আবেগপূর্ণ। আইভি আপা তখনো মারা যাননি। তিনি ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক জাঁদরেল অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমদের মেয়ে। আমাদের বোনের মতো। তা ছাড়া ষাটের দশক থেকে যেসব নারী বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন—আইভি রহমান তাঁদের একজন। মহিলা আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে তিনি অক্লান্ত ভাবে কাজ করেছেন। সুতরাং আমার প্রথম লেখাটিতে প্রকাশ পেয়েছিল ক্রোধ, ক্ষোভ ও বেদনা। এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে শোক ছিল সীমাহীন।
আমার দ্বিতীয় লেখাটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের অংশবিশেষ কাগজে প্রকাশের পরে লেখা। সরকারি তদন্ত কমিশনের রিপোর্টকে আমি একটি ‘ভাববাদী রচনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলাম। রচয়িতা ছিলেন একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তবে তিনি ছিলেন খুবই প্রতিভাবান। কবি হলে প্রায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের পর্যায়ের কবি হতে পারতেন। মরমি ভাবধারার সাধনা করলে পৌঁছে যেতেন লালন শাহ না হলেও পাগলা কানাইয়ের কাছাকাছি। পুরো ঘটনাটির দায়দায়িত্ব তিনি অবলীলায় ‘একটি প্রতিবেশী দেশের’ ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, নাম যখন তিনি বলেননি, দেশটি তাহলে মিয়ানমারই হবে। মাননীয় বিচারপতির ওই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশের পরে মহাজোট সরকারের নেতারা মহা আনন্দে বগল বাজাতে থাকেন। মানুষ মরে মরুক গিয়ে, অপরাধী হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে নয়, আস্ত একটা রাষ্ট্রকে দোষী সাব্যস্ত করা গেছে। তা করাটা যেমন-তেমন কৃতিত্ব নয়।
বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাত্র এক মাস ১০ দিনের মধ্যে তাঁর ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি রচনা করেন। প্রথমেই তিনি গিয়েছিলেন অকুস্থলে। তখন সেখানে ছিল থোক থোক শুকনো রক্ত ও অসংখ্য স্যান্ডেল। যাঁরা নিহত বা আহত হয়েছিলেন তাদেরই জুতা-স্যান্ডেল। তিনি সেখানে গিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ’ করেন। হাডুডু খেলার সময় রেফারি যেভাবে কোর্টের সীমারেখা পর্যবেক্ষণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁর সেই পর্যবেক্ষণের ছবিটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ এনেছিলেন। ওই কাজটি সাধারণত পত্রিকার কলাম লেখকেরা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা তাঁদের থিসিস রচনার সময় করেন, তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন লেখকেরা না করাই ভালো। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করলেও তার মনোজ্ঞ বক্তব্য প্রকাশিত হয়ে যায়। ওই বক্তব্যের সঙ্গে জোট সরকারের নেতাদের সভা-সমাবেশের ভাষ্য এবং তাঁদের সমর্থক লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের বক্তব্যে আশ্চর্য মিল।
তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে কাঁটায় কাঁটায় মিলে গিয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক ব্রি. জে. আবদুর রহিমের (অব) কথা। ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন চিকিত্সার জন্য। ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুরে এয়ারবাসে থাকা অবস্থায় তিনি ঘটনার কথা জানতে পারেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়, ওদিকে সিঙ্গাপুর থেকে ‘ফেরার পথে যখন প্লেনে ছিলেন তখন [তাঁর] শরীরে একটি এবসেস ব্লাস্ট করে এবং তা থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।’ অর্থাৎ তাঁর নিজের ভাষায়, ঢাকায় বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড বা বোমা, আর তাঁর শরীরে বিস্ফোরিত হয় ফোঁড়া (তিনি বলেছেন ‘ব্লাস্ট’, আসলে হবে ‘বাস্ট’—ফেটে যাওয়া)। সাধারণ মানুষের শরীরের রক্তক্ষরণে ঢাকার রাজপথ সয়লাব হয়, ওদিকে গোয়েন্দাপ্রধানের শরীর ‘থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে’। কপাল আমাদের বটে। কত কিছু জানলাম।
ওই গ্রেনেড হামলা নিয়ে আদৌ কোনো মামলা-মোকদ্দমা না হলেই সরকারের জন্য ভালো ছিল। কিন্তু বাধ্য হয়ে একটা মামলা করতে হয়। প্রথমে সে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা বা ডিবিকে। কয়েক দিন পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডিতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানকার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা আরও সৎ ও দক্ষ। তাঁদের নামও কাগজে আসে। তাঁরা হলেন সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ, মুন্সি আতিক এবং বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন।
অপরাধের দুজন খাঁটি আসামিকে তাঁরা পেয়ে যান। তাঁদের একজন শৈবাল সাহা পার্থ নামে এক যুবক, আর একজন জজ মিয়া। পার্থ বেচারা আরও হাজার হাজার বাংলাদেশির মতো ভারতে লেখাপড়া করেছিলেন। তাই তিনি সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চর না হয়েই পারেন না। তাঁকে পাঁচটি দিন চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সাতটি মাস বিনা বিচারে জেলে পচে হাইকোর্টের নির্দেশে ছাড়া পান। শক্তিমান রাষ্ট্রযন্ত্র একজন দুর্বল নাগরিকের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে এবং ষড়যন্ত্র করতে পারে—ভাবাও যায় না।
পার্থকে দিয়ে পারা গেল না, তবে কোনো কিছুই ঠেকে থাকে না। পাওয়া গেল জজ মিয়াকে। লম্বা রিমান্ডে নিয়ে ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ গ্রহণের রেওয়াজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সাহেবই চালু করেন। এখন তার স্বাদ ভোগ করছেন তাঁর দলের লোকেরাই। ১৭ দিন জজ মিয়া রিমান্ডে থাকেন। তখন তাঁর এমন জবানবন্দি আদায় করা হয় যা আরব্য রজনীর এক হাজার দুই নম্বর গল্প হিসেবে যুক্ত হতে পারে। রাষ্ট্রযন্ত্র কতটা মিথ্যার বেসাতি করতে পারে তার দৃষ্টান্ত জজ মিয়া উপাখ্যান। তবে এই বিত্তহীন লোকটিকে সিআইডি বক্ষে ধারণ করে ভালোই করেছিল। তাঁকে আজীবন বন্দী করে রাখলে তাঁর পরিবার আরও বেশি উপকৃত হতো। তাঁর বৃদ্ধা মাকে সিআইডি মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিচ্ছিল। ২১ আগস্টের এই তদন্তকেচ্ছার পরে দেশের বহু উপার্জনহীন পরিবার চাইবে, তাদের কাউকে যেকোনো রাজনৈতিক মামলায় সিআইডি আটক করুক।
অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার আগে তা নিয়ে তদন্ত করাটা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। ব্রিটিশ আমল থেকে তা খুবই নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে হয়ে আসছে। পাকিস্তান আমলেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ আমলে তদন্ত কর্মকর্তারা স্বাধীন হয়ে যান। একেবারে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে—যা মনে আসে এবং ওপরের কর্তারা যা মর্জি করেন, সেইভাবে প্রতিবেদন রচনা করেন। তাঁদের ওই রচনার সঙ্গে আইন-কানুন ও সত্য-ন্যায়ের কোনো সম্পর্ক থাকার প্রয়োজন নেই। একটি রহস্য-কাহিনি তাঁরা লিখে ফেলেন। তাঁরা যেন একেকজন নীহার রঞ্জন গুপ্ত। জজ মিয়ার জবানবন্দিকে আমরা আরেকখানা ‘রাতের রজনীগন্ধা’ বা ‘কিরিটী অমনিবাস’ মনে করতে পারি।
আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ভুলে যান যে রাষ্ট্রের বেতনভুক লোক হলেও তারাও মানুষ। রাষ্ট্র টাকা দিয়ে তার শ্রম ও মেধা কিনছে, কিন্তু তাঁর বিবেক তাঁর নিজের সম্পদ, তা বিক্রয়যোগ্য দ্রব্য নয়। তবে আমাদের দেশে সেই বিবেকটাই বিক্রি হয় দেদার—পথেঘাটে, অফিসে, আদালতে। সত্য আড়াল করতে, জাল মামলা খাড়া করতে যেসব পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তা রাত জেগে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, তাঁরা অবসরে গেলেও, তাঁরা কেন বিচারের মুখোমুখি হবেন না?
আমরা খালেদা-নিজামী-বাবরের নিয়োজিত তদন্ত কর্মকর্তাদেরও অবিশ্বাস করব না। বিচারপতি আবেদীনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ থেকেও বিশ্বাস হারাতে চাই না। বাবর সাহেবের ইংরেজি-বাংলা মিশ্রিত বক্তব্যকেও মূল্যহীন মনে করি না। সে সময়ের নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষকর্তার কথা অবিশ্বাস করা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতার নামান্তর। তাঁদের প্রতিবেদন ও বক্তব্য সরকার পর্যালোচনা করে দেখুক। এবং তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে বলা যায়, ২১ আগস্টের গ্রেনেডবাজি ছিল একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাজনৈতিক সন্ত্রাস তো বটেই। কিছু রাজনৈতিক সন্ত্রাসে রাষ্ট্রের কোনো কোনো সংস্থার কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মদদ থাকতেই পারে। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে তা করা হয়। কোনো সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য নৃশংস সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয় কেউ কেউ। ২১ আগস্টের ঘটনাটি যে তা নয় তা বলা যায় না। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো চক্র অথবা জনগণের শত্রুপক্ষের কেউ—দেশি হোক বা আন্তর্জাতিক হোক—এ জাতীয় কাজ করতে পারে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কোনো শত্রু এ কাজ করলে তারা জনসভায় এত মানুষ মারার ঝুঁকিতে যেত না। যারা এটা করেছে তারা একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র—দুটোকেই হত্যা করতে চেয়েছিল।
২১ আগস্ট অপরাহ্নে শেখ হাসিনা নিহত হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যেত। তাতে জোট সরকারের যে লাভ হতো সে নিশ্চয়তা তাদের কে দিয়েছিল? সরকারের পতন পর্যন্ত ঘটতে পারত। এবং বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, যা হয়েছে ১১ জানুয়ারি ২০০৭ তা হতে পারত ২১ আগস্ট ২০০৪। আড়াই বছর আগেই সেদিন আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘সেনাসমর্থিত সরকার’ পেতে পারতাম। আর কেউ না জানলেও বেগম জিয়ার তো সেটা বোঝা উচিত ছিল। তার পরও কেন তিনি বাঁচাতে গেলেন গ্রেনেডবাজদের? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনো দিনই পাওয়া যাবে না।
বাবর সাহেব যদি কোনো দিন বিদেশবিভুঁইয়ে কোনো নিরাপদ জায়গায় বসে স্মৃতিকথা লেখেন, সেই বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত মেময়ারে সত্য কথাটি জানা যাবে। তদন্তের নামে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে তিনি যে মিথ্যার দোকান খুলে বসেছিলেন তা একটি ক্লাসিক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা বা জালিয়াতি হিসেবে বিবেচিত হবে চিরকাল। একটি অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্র নিজেই আর একটি জঘন্য অপরাধ করে বসল।
যেকোনো অপরাধের বিচারের জন্য প্রথমেই দরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। ভেজাল তদন্তে ভালো বিচার হতে পারে না। ন্যায় বিচারের জন্য নিরপেক্ষ সত্য—যাকে আমরা বলি ইমপার্শিয়াল ট্রুথ—তাকেই মূল্য দিতে হবে। প্রতিপক্ষকে প্রতিহিংসাবশত ফাঁসানোর জন্য তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা গর্হিত অপরাধ। তা যদি হয়, জোট সরকার ও মহাজোট সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না।
একদিক দিয়ে আওয়ামী লীগ ভাগ্যবান, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসায় গ্রেনেড হামলার বিচার করার সুযোগ পেয়েছে। মামলার নতুন তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন তথ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। কয়েক মাসের মধ্যে বিচার শুরু হবে। আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত—ফরিয়াদি। বিচার হবে তাদের সরকারের সময়। এটি একটি সুযোগ। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার অথবা অপব্যবহারের যেকোনো একটি হতে পারে। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগ সরকার বাবর সাহেবদের মতো অপরাধটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করবে না। বিচারপ্রক্রিয়ায়ও কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করবে না। আইনকে স্বাভাবিকভাবে তার নিজের গতিতে চলবে সাহায্য করবে। ইতিহাস নির্মমভাবে নিরপেক্ষ। যেকোনো বড় ব্যক্তিই হোন, দল হোক বা রাষ্ট্র হোক—কারও কোনো অপকর্মকেই সে ক্ষমা করে না।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
২১ আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা হামলা নিয়ে আমি এর আগে কয়েকটি লেখা লিখেছি। প্রথম লেখাটি প্রকাশিত হয় ঘটনার একদিন পরে আমার এই কলামে। হাসপাতালে আহতদের দেখে এসে লেখা বলে লেখাটি ছিল আবেগপূর্ণ। আইভি আপা তখনো মারা যাননি। তিনি ছিলেন আমার সরাসরি শিক্ষক জাঁদরেল অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমদের মেয়ে। আমাদের বোনের মতো। তা ছাড়া ষাটের দশক থেকে যেসব নারী বাংলাদেশে প্রত্যক্ষভাবে মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন—আইভি রহমান তাঁদের একজন। মহিলা আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে তিনি অক্লান্ত ভাবে কাজ করেছেন। সুতরাং আমার প্রথম লেখাটিতে প্রকাশ পেয়েছিল ক্রোধ, ক্ষোভ ও বেদনা। এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে শোক ছিল সীমাহীন।
আমার দ্বিতীয় লেখাটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের অংশবিশেষ কাগজে প্রকাশের পরে লেখা। সরকারি তদন্ত কমিশনের রিপোর্টকে আমি একটি ‘ভাববাদী রচনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলাম। রচয়িতা ছিলেন একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। তবে তিনি ছিলেন খুবই প্রতিভাবান। কবি হলে প্রায় রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের পর্যায়ের কবি হতে পারতেন। মরমি ভাবধারার সাধনা করলে পৌঁছে যেতেন লালন শাহ না হলেও পাগলা কানাইয়ের কাছাকাছি। পুরো ঘটনাটির দায়দায়িত্ব তিনি অবলীলায় ‘একটি প্রতিবেশী দেশের’ ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, নাম যখন তিনি বলেননি, দেশটি তাহলে মিয়ানমারই হবে। মাননীয় বিচারপতির ওই প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশের পরে মহাজোট সরকারের নেতারা মহা আনন্দে বগল বাজাতে থাকেন। মানুষ মরে মরুক গিয়ে, অপরাধী হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে নয়, আস্ত একটা রাষ্ট্রকে দোষী সাব্যস্ত করা গেছে। তা করাটা যেমন-তেমন কৃতিত্ব নয়।
বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাত্র এক মাস ১০ দিনের মধ্যে তাঁর ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি রচনা করেন। প্রথমেই তিনি গিয়েছিলেন অকুস্থলে। তখন সেখানে ছিল থোক থোক শুকনো রক্ত ও অসংখ্য স্যান্ডেল। যাঁরা নিহত বা আহত হয়েছিলেন তাদেরই জুতা-স্যান্ডেল। তিনি সেখানে গিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে ‘গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ’ করেন। হাডুডু খেলার সময় রেফারি যেভাবে কোর্টের সীমারেখা পর্যবেক্ষণ করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁর সেই পর্যবেক্ষণের ছবিটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান ‘বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ এনেছিলেন। ওই কাজটি সাধারণত পত্রিকার কলাম লেখকেরা করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা তাঁদের থিসিস রচনার সময় করেন, তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন লেখকেরা না করাই ভালো। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করলেও তার মনোজ্ঞ বক্তব্য প্রকাশিত হয়ে যায়। ওই বক্তব্যের সঙ্গে জোট সরকারের নেতাদের সভা-সমাবেশের ভাষ্য এবং তাঁদের সমর্থক লেখক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের বক্তব্যে আশ্চর্য মিল।
তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে কাঁটায় কাঁটায় মিলে গিয়েছিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক ব্রি. জে. আবদুর রহিমের (অব) কথা। ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে ছিলেন চিকিত্সার জন্য। ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুরে এয়ারবাসে থাকা অবস্থায় তিনি ঘটনার কথা জানতে পারেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়, ওদিকে সিঙ্গাপুর থেকে ‘ফেরার পথে যখন প্লেনে ছিলেন তখন [তাঁর] শরীরে একটি এবসেস ব্লাস্ট করে এবং তা থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে।’ অর্থাৎ তাঁর নিজের ভাষায়, ঢাকায় বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড বা বোমা, আর তাঁর শরীরে বিস্ফোরিত হয় ফোঁড়া (তিনি বলেছেন ‘ব্লাস্ট’, আসলে হবে ‘বাস্ট’—ফেটে যাওয়া)। সাধারণ মানুষের শরীরের রক্তক্ষরণে ঢাকার রাজপথ সয়লাব হয়, ওদিকে গোয়েন্দাপ্রধানের শরীর ‘থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে’। কপাল আমাদের বটে। কত কিছু জানলাম।
ওই গ্রেনেড হামলা নিয়ে আদৌ কোনো মামলা-মোকদ্দমা না হলেই সরকারের জন্য ভালো ছিল। কিন্তু বাধ্য হয়ে একটা মামলা করতে হয়। প্রথমে সে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা বা ডিবিকে। কয়েক দিন পরে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা সিআইডিতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানকার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা আরও সৎ ও দক্ষ। তাঁদের নামও কাগজে আসে। তাঁরা হলেন সিআইডির এএসপি আবদুর রশিদ, মুন্সি আতিক এবং বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন।
অপরাধের দুজন খাঁটি আসামিকে তাঁরা পেয়ে যান। তাঁদের একজন শৈবাল সাহা পার্থ নামে এক যুবক, আর একজন জজ মিয়া। পার্থ বেচারা আরও হাজার হাজার বাংলাদেশির মতো ভারতে লেখাপড়া করেছিলেন। তাই তিনি সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থার চর না হয়েই পারেন না। তাঁকে পাঁচটি দিন চোখ বেঁধে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। শারীরিক-মানসিক নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সাতটি মাস বিনা বিচারে জেলে পচে হাইকোর্টের নির্দেশে ছাড়া পান। শক্তিমান রাষ্ট্রযন্ত্র একজন দুর্বল নাগরিকের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে এবং ষড়যন্ত্র করতে পারে—ভাবাও যায় না।
পার্থকে দিয়ে পারা গেল না, তবে কোনো কিছুই ঠেকে থাকে না। পাওয়া গেল জজ মিয়াকে। লম্বা রিমান্ডে নিয়ে ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ গ্রহণের রেওয়াজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর সাহেবই চালু করেন। এখন তার স্বাদ ভোগ করছেন তাঁর দলের লোকেরাই। ১৭ দিন জজ মিয়া রিমান্ডে থাকেন। তখন তাঁর এমন জবানবন্দি আদায় করা হয় যা আরব্য রজনীর এক হাজার দুই নম্বর গল্প হিসেবে যুক্ত হতে পারে। রাষ্ট্রযন্ত্র কতটা মিথ্যার বেসাতি করতে পারে তার দৃষ্টান্ত জজ মিয়া উপাখ্যান। তবে এই বিত্তহীন লোকটিকে সিআইডি বক্ষে ধারণ করে ভালোই করেছিল। তাঁকে আজীবন বন্দী করে রাখলে তাঁর পরিবার আরও বেশি উপকৃত হতো। তাঁর বৃদ্ধা মাকে সিআইডি মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিচ্ছিল। ২১ আগস্টের এই তদন্তকেচ্ছার পরে দেশের বহু উপার্জনহীন পরিবার চাইবে, তাদের কাউকে যেকোনো রাজনৈতিক মামলায় সিআইডি আটক করুক।
অপরাধের বিচার শুরু হওয়ার আগে তা নিয়ে তদন্ত করাটা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। ব্রিটিশ আমল থেকে তা খুবই নিরপেক্ষ ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে হয়ে আসছে। পাকিস্তান আমলেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ আমলে তদন্ত কর্মকর্তারা স্বাধীন হয়ে যান। একেবারে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে—যা মনে আসে এবং ওপরের কর্তারা যা মর্জি করেন, সেইভাবে প্রতিবেদন রচনা করেন। তাঁদের ওই রচনার সঙ্গে আইন-কানুন ও সত্য-ন্যায়ের কোনো সম্পর্ক থাকার প্রয়োজন নেই। একটি রহস্য-কাহিনি তাঁরা লিখে ফেলেন। তাঁরা যেন একেকজন নীহার রঞ্জন গুপ্ত। জজ মিয়ার জবানবন্দিকে আমরা আরেকখানা ‘রাতের রজনীগন্ধা’ বা ‘কিরিটী অমনিবাস’ মনে করতে পারি।
আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তারা ভুলে যান যে রাষ্ট্রের বেতনভুক লোক হলেও তারাও মানুষ। রাষ্ট্র টাকা দিয়ে তার শ্রম ও মেধা কিনছে, কিন্তু তাঁর বিবেক তাঁর নিজের সম্পদ, তা বিক্রয়যোগ্য দ্রব্য নয়। তবে আমাদের দেশে সেই বিবেকটাই বিক্রি হয় দেদার—পথেঘাটে, অফিসে, আদালতে। সত্য আড়াল করতে, জাল মামলা খাড়া করতে যেসব পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তা রাত জেগে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, তাঁরা অবসরে গেলেও, তাঁরা কেন বিচারের মুখোমুখি হবেন না?
আমরা খালেদা-নিজামী-বাবরের নিয়োজিত তদন্ত কর্মকর্তাদেরও অবিশ্বাস করব না। বিচারপতি আবেদীনের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ থেকেও বিশ্বাস হারাতে চাই না। বাবর সাহেবের ইংরেজি-বাংলা মিশ্রিত বক্তব্যকেও মূল্যহীন মনে করি না। সে সময়ের নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষকর্তার কথা অবিশ্বাস করা তো রাষ্ট্রদ্রোহিতার নামান্তর। তাঁদের প্রতিবেদন ও বক্তব্য সরকার পর্যালোচনা করে দেখুক। এবং তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
এ পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে বলা যায়, ২১ আগস্টের গ্রেনেডবাজি ছিল একটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। রাজনৈতিক সন্ত্রাস তো বটেই। কিছু রাজনৈতিক সন্ত্রাসে রাষ্ট্রের কোনো কোনো সংস্থার কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর মদদ থাকতেই পারে। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে তা করা হয়। কোনো সুদূরপ্রসারী নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য নৃশংস সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয় কেউ কেউ। ২১ আগস্টের ঘটনাটি যে তা নয় তা বলা যায় না। রাষ্ট্রবিরোধী কোনো চক্র অথবা জনগণের শত্রুপক্ষের কেউ—দেশি হোক বা আন্তর্জাতিক হোক—এ জাতীয় কাজ করতে পারে। শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কোনো শত্রু এ কাজ করলে তারা জনসভায় এত মানুষ মারার ঝুঁকিতে যেত না। যারা এটা করেছে তারা একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্র—দুটোকেই হত্যা করতে চেয়েছিল।
২১ আগস্ট অপরাহ্নে শেখ হাসিনা নিহত হলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যেত। তাতে জোট সরকারের যে লাভ হতো সে নিশ্চয়তা তাদের কে দিয়েছিল? সরকারের পতন পর্যন্ত ঘটতে পারত। এবং বাংলাদেশের রাজনীতির ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা বলতে পারি, যা হয়েছে ১১ জানুয়ারি ২০০৭ তা হতে পারত ২১ আগস্ট ২০০৪। আড়াই বছর আগেই সেদিন আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘সেনাসমর্থিত সরকার’ পেতে পারতাম। আর কেউ না জানলেও বেগম জিয়ার তো সেটা বোঝা উচিত ছিল। তার পরও কেন তিনি বাঁচাতে গেলেন গ্রেনেডবাজদের? এ প্রশ্নের উত্তর হয়তো কোনো দিনই পাওয়া যাবে না।
বাবর সাহেব যদি কোনো দিন বিদেশবিভুঁইয়ে কোনো নিরাপদ জায়গায় বসে স্মৃতিকথা লেখেন, সেই বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত মেময়ারে সত্য কথাটি জানা যাবে। তদন্তের নামে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে তিনি যে মিথ্যার দোকান খুলে বসেছিলেন তা একটি ক্লাসিক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা বা জালিয়াতি হিসেবে বিবেচিত হবে চিরকাল। একটি অপরাধের তদন্ত করতে গিয়ে রাষ্ট্র নিজেই আর একটি জঘন্য অপরাধ করে বসল।
যেকোনো অপরাধের বিচারের জন্য প্রথমেই দরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। ভেজাল তদন্তে ভালো বিচার হতে পারে না। ন্যায় বিচারের জন্য নিরপেক্ষ সত্য—যাকে আমরা বলি ইমপার্শিয়াল ট্রুথ—তাকেই মূল্য দিতে হবে। প্রতিপক্ষকে প্রতিহিংসাবশত ফাঁসানোর জন্য তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা গর্হিত অপরাধ। তা যদি হয়, জোট সরকার ও মহাজোট সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না।
একদিক দিয়ে আওয়ামী লীগ ভাগ্যবান, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসায় গ্রেনেড হামলার বিচার করার সুযোগ পেয়েছে। মামলার নতুন তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। নতুন তথ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে। কয়েক মাসের মধ্যে বিচার শুরু হবে। আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত—ফরিয়াদি। বিচার হবে তাদের সরকারের সময়। এটি একটি সুযোগ। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার অথবা অপব্যবহারের যেকোনো একটি হতে পারে। আমরা আশা করব, আওয়ামী লীগ সরকার বাবর সাহেবদের মতো অপরাধটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করবে না। বিচারপ্রক্রিয়ায়ও কোনোরকম প্রভাব বিস্তার করবে না। আইনকে স্বাভাবিকভাবে তার নিজের গতিতে চলবে সাহায্য করবে। ইতিহাস নির্মমভাবে নিরপেক্ষ। যেকোনো বড় ব্যক্তিই হোন, দল হোক বা রাষ্ট্র হোক—কারও কোনো অপকর্মকেই সে ক্ষমা করে না।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
সৈয়দ আবুল মকসুদ | তারিখ: ২১-০৮-২০১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন